সোয়েব মাহমুদের কবিতা

সোয়েব মাহমুদের কয়েকটি কবিতা


আমি এক ব্যর্থ চ্যাপলিন -  

এই যে শুনুন, আমি, ব্যর্থ চ্যাপলিন— সিস্টাইন চ্যাপেলের।

প্রিয় নারীরা যদি আপনাদের কখনও আকাশ ছুঁতে ইচ্ছে হয়,

যদি কখনও সাধ হয় উড়ে যাবার পাখির মতন  

তবে সিকি শতাব্দী পূর্বে সাতশ নারীস্তন থেকে 

আমি যে ডানা এনেছিলাম,

অস্বাস্থ্যসম্মত প্রত্যাখানে আবার, 

যে ডানায় আমি উড়ে গিয়েছিলাম কর্পুরের মতন,

সে ডানা চাইলে নিয়ে 

আকাশের বুক থেকে, 

আকাশের সামিয়ানায় উড়ে বেড়াতে পারেন।

যদি কখনও আপনারা হারিয়ে ফেলেন ঠিকানা,

হারিয়ে ফেলেন আশ্রয়,

চাইলে রাত বারোটার লোকাল এসে পরবার পর,

শহরের বাঁ -প্রান্তের শেষ বাড়িটার কড়া নেড়ে দ্যাখতে পারেন,

কড়া নাড়লেই ভেতর থেকে উদোম গায়ে 

বেরিয়ে আসবেন হাতে নিয়ে জ্বলন্ত হৃদয়

একজন কবি- একজন রাষ্ট্রদ্রোহী,

একজন সামাজিক বেশ্যালয় পরিত্যাগ করা,

পৃথিবীর জীবিত থাকা একমাত্র প্রেমিক।

আপনারা ওখানে তার কাছে গিয়ে বসতে পারেন।

দ্যাখে নিতে পারেন " পাবলো নেরুদার জন্ম!"

দ্যাখে নিতে পারেন " সেবাষ্টিয়ানের মৃত্যু"

শুনে নিতে পারেন " আ জম্বি হোয়েন ক্রাই" অথবা হুইস্কি লুলাবাই।

ওখানে নির্বিঘ্নে গোটা রাত নিশ্চিন্তে কাটিয়ে  ভোরবেলায় আপনার চোখে মুখে নিয়ে কুয়াশা 

আপনি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন চলন্ত ট্রাকের সামনে,

কারণ আপনি জানেন আপনি কাউকে বলতে পারবেন না,

নিজের ভেতর নিজে পুড়ে মারা যাবেন একা ভীষণ একা, 

কারণ আপনি জানেন 

যে দৃশ্য আপনি আবিস্কার করলেন সারাটা রাত কাটাবার পর, 

সে দৃশ্য আপনার ভেতর দুমরে মুচড়ে দিয়ে সকল প্রস্তাবিত বিশ্বাস, 

প্রতিস্থাপন করেছে ভালোবাসা।

কারণ আপনি জানেন  

এতটা সময় যেখানে কাটালেন সেটা আসলে শহরের শেষ কবর, 

শেষ বাড়িটার ভেতর।

যার ফলকে লেখা - একা শব্দের একমাত্র প্রতিশব্দ

সোয়েব মাহমুদ এবং তিনি

বাড়ি আসেন নি, ঘরে ফেরেনি রাস্তাঘাট।

ট্রেনগুলো ফিরে গেছে স্টেশনে অথচ

শেষ লোকালেও আসেনি প্রজাপতি, আমার সাদা প্রজাপতি।


স্পষ্টত স্পর্শের বাইরে


তুমি আমার ভেতরে ঢুকে পড়লে অথচ 

তোমার কোন স্পর্শ আমাকে জাগাতে পারেনা।

নগ্নতার মাঝে আরও বেশি নগ্ন হয়ে ছুঁয়ে বসে থাকি শীতযোনী।

ভালোবাসার কোনদিনই কোন রক্ষাকবচ ছিলোনা।

তাই প্রচন্ড শীতের লেপ সরিয়ে,

ঘন অন্ধকারে কুয়াশার নিরাপত্তা সরিয়ে,

একটা চশমায় তোমার গালের কালো দ্বীপ খুঁজি।

স্পর্শের বাইরে স্পর্শের আঘাতে নুয়ে থাকে,

নিকোটিন গন্ধে জেগে থাকে সদ্যবিধবা দেয়াল।

যে দেয়ালে সংরক্ষিত সফেদে আঁকা ছিলো ভালোবাসায় ঘুমের শিশুর মুখ।

অথচ তোমাকে আমি কখনও স্পর্শ করিনি,

অথচ তোমার স্পর্শ আমাকে জাগাতে পারেনা।



কবি'কে

প্রিয় সুধী বৃহস্পতিবার রাতে একখানা প্রেমের কবিতা লিখতে ব্যর্থ কলম, 

লিখে দিচ্ছে উগান্ডা নামক গণতান্ত্রিক এক বুর্জোয়াবাদী 

শাষন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের অবাধ্যতার কথা। 

শুনানী হচ্ছে বদ্ধ ঘরে, শুনানী হচ্ছে মৃত্যুর পর ধর্ষণের শিকার রাষ্ট্রের।

বলা হচ্ছে মৃত্যুর পর  বুক থেকে খসে যাওয়া আঁচল নাকি 

     মন্ত্রীর ছেলেকে বাধ্য করেছে ধর্ষন করতে।

বলা হচ্ছে  নেকরোফিলিয়া রোগাক্রান্ত হলে 

এর কোনও বিচারিক দায় নেই, বিচার ব্যবস্থায়।

হাহ??

তোমাদের নরকের মেঘ স্ফীত হয় না,

তাই প্যান্টের জিপার খুলেও আটকে ফেলি।

ভাবছেন কোনও অসহায় মেয়ে আমার সামনে শুয়ে?

ভুল ভাবছেন তবে।

ধর্ষন করতেও আজকাল মেধা দরকার,

অতটা মেধাবী ,

উগান্ডার যেমন খুশি তেমন শিক্ষা ব্যবস্থা অন্তত আমাকে বানাতে পারেনি।

আমি জিপার খুলে ফেলি,

আমার সামনে আমার উদর পূর্তির সরকারী চাকুরী,

আমার সামনে উপ-সচিব মহোদয়া,

আমার সামনে বক্ষবন্ধনীহীন বক্ষ উন্মোচনের অপেক্ষায়

সহ- পরিচালক (রাজস্ব) এবং (আইন)

সামনে ধর্মান্ধ এবং ধর্ম বিদ্বেষী বেনিয়ার দল,

সামনে নির্লজ্জ বেহায়া মন্ত্রি- পরিষদ।

সামনে বসা অন্তর্বাস চুলকানো মানবাধিকার কাউন্সিল।

গোয়েন্দা সংস্থার হোঁতকা মোটা পরিচালক ব্যস্ত মাদকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারায়

রাস্তা থেকে রাষ্ট্র ডাকনামে তুলে এনে আমায় ,

বিচার হচ্ছে,, বিচার হচ্ছে ভয়ঙ্কর  আমার!

বিচার হচ্ছে শব্দের যা কবিতায় আওয়াজ করেছে।

বুদ্ধি বেশ্যারা ,বানচোদরা নসিহতে ব্যস্ত আঙুল থামিয়ে শুনছে ট্রায়াল।

ঠিক সেই মুহূর্তে আমি জিপার খুলে মুতে দেই আমার রাষ্ট্রে।

মুতে দেই বিচারিক ব্যবস্থায়,

মুতে দেই উগান্ডা বইমেলা পরিষদের জুতোয়

মুতে দেই পাসপোর্ট , নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, আমার সরকারি চাকুরীর উপর।

ভাবছেন বোকার হদ্দ আমি একি করলাম?

জ্বি বোকা আমি,

কবিকে মেধাবী নয় প্রতিবাদী হতে হয়।

শুনেছি বাংলাদেশেও নাকি মেধাবী কবি ‘র ছড়াছড়ি,

প্রতিবাদহীনতায় ,পুরস্কারে ভেসে গেছে অন্তর্গত বীজতলা,

শুনেছি এত এত মেধায়ও গত চব্বিশ বছর বন্ধ্যাত্ব বাংলা কবিতায় ,

শুনেছি পা চেটে খাওয়া কুকুরের অভ্যাসে সব মেধাবী কবি

লিখতে পারেনি একটা কবিতাও, কেবল হামবড়া আমিত্ববাদে আস্ফালন করেছে শুধুই।

“তবে জিপার খুলে মুতে দিয়েই ভালোই করেছিস–

বন্ধু নবারুনে হুঁশ ফেরে উগান্ডার ,বাংলার কি ফিরবে ?

বাংলাও কি বুঝবে কখনও –

“কবি ‘কে মেধাবী নয় প্রতিবাদী হতে হয়।



জগ ভরতি বৃষ্টি


জগ ভরতি ঝড় নিয়ে গ্লাসে বৃষ্টি ঢালা বন্ধ করে,

শহরের সকল শাড়ি, 

                      ব্লাউজ 

                              আর 

                       লোহার ব্রেসিয়ার থেকে সেফটিপিন খুলে ফেলুন।

আয়নায় তাকিয়ে একবার নিজেকে দেখুন।

আপনার মেধাবী মাথার ভেতর থাকা 

                                     মস্তিষ্ককে,

ঘরে চলাচলকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের মতন একটু থামিয়ে,

   ভাবুন-

       ভাবলেই দেখবেন-

বিপ্লব থেকে বিপ্লবীরা ফিরে আসেনা-

যারা ফেরে তারা বিপ্লবী নন, কেবল বিপ্লবের ভেতর থাকা নষ্ট ইঁদুর।

বিছানা বালিশেরো একটা আদর্শ থাকে,

রাতের প্রচারিত রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের কবিতায় যা অনুপস্থিত।

আর তাই বলছি শুনুন-

             বুকপকেট থেকে গ্রাম, 

      সাইড পকেট থেকে শহর,

             আর আলো থেকে অন্ধকার আলাদা করে,

রাতের বেলায় খাটের নীচে তাকাবেন না!

সাবধান, চরিত্রের '' দূর্বল চ" হেলে পড়তে পারে যখন তখন।

বুকভর্তি জলে নাকভর্তি স্থলে হেটে বেড়াবেন না।

শহরের বুকে কফ সারাশরীর ভর্তি জ্বর নেমেছে এখন।








লেখক পরিচিতি : 




সোয়েব মাহমুদ―

 

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর,  গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়। 
     পড়াশোনা করেছেন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ অফ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সাইপ্রাস থেকে 



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ