শুভ্র সরকারের কবিতা

সূর্যছবির সন্ধ্যায়

শুভ্র সরকারের কবিতা


এক. 


সূর্যমার্জিনে দুপুর অতিকায়,

তুমি আয়নার একান্তে এসে খুলে দিচ্ছ

প্রসাধন

আমাদের প্রায় একঘেয়ে কথাবার্তা 

নিতান্ত লাগছে—  ফিরে আসার পর। 

আকাশে তাকানোর বিন্যাস থেকে বুঝি

 জীবন আশ্চর্য! দিনান্ত রুধির— 

তবু নিজেকে ভাঙছি না কেউ

কারো নিকট


দুই.


মেঘ, বিলীন হও ঝম ঝম— 

এই আশ্বিন মল মাস, 

হাওয়া অলস, শস্যখেতে কখনো অনেক

রোদের পাহাড়—  বহু — পাশে ছড়ায়

পাতার মিহিন ছুঁয়ে,  গাছ ভালো লাগছে পীতরাজ 

এখনও ফোটেনি মন্দিরের পুরাণ?


তিন. 


যাবো বলে,  ইতস্তত

সূর্যমুখীর ছাউনিসমেতে পুরনো সেই

হলুদ আর্বান 

রোদের প্রতাপে জাগে, 

পৃথিবীতো কত ভাষার

 ছোট গৃহে তুমিটি দাঁড়াও

গৌরঘামে,  খোলা চুলে একজীবন

ক্রোধ রেখে ডুবে যায় অসুর

দশমীর জলে 

দেবী, চিরকাল অহং— 


চার.


হাওয়া হন্তদন্ত আসে, যায়— 

দেখছি, গোধূলি গ্রাম। মায়াবী দিন।

নুয়ে থাকে ছায়াপাশে রোদ্রমাতাল

যতদূর কেউ এসে মোহন, জেগে রই

যদি ক্ষয়ে যাই— মুছে দিও সকল

দম্ভের গান


পাঁচ.


ফুলেরা লিখে রাখো, শেষ ঝরাটুকু—

মাটিকে খাতা ভেবে অসংখ্যবার

দিগন্ত দশদিক, ভাসিয়ে দিচ্ছি

স্থবির যত চিৎকার


যেন এই বিকেল, বিকেলে

মিশে যাচ্ছে কেমন 

মানুষের অকারণ হল্লা

আর ব্রিজ থেকে একা একা

নেমে আসা কারো পায়ের 

পাপ— 


নাচের চৌয়াড়ি


পাখিরা কান্নার মতো নামছে

এভাবেই ধারণা করি, বিচ্ছিন্ন মানুষের মনখারাপ নেমে এলে

কেউ সন্ধ্যাটা বাজায়

একজন কলা বিক্রেতার গন্ধের ভিতর উড়ছে

গোটা কয়েক মাছির মধুক্ষণ


দরিচারআনি বাজার, যেভাবে কেউ ফিরছে

তাকে অনেকটা দূর মনে হয়!

নাচের চৌয়াড়ি, যেখানে রঙের পা

বাঈজীর সমস্ত নাচ

মুছে গেছে অনঙ্গ হাওয়ায়


গণ্ডি


আর কত! ভেতরে মরে যাবো আমি

আত্মক্ষরণে—

যেভাবে বুক ভরা তোমাদের আচ্ছুত নিষ্ঠুরতা

আহা, সরে যাওয়া তোমাদের অনাদরে

আমি  কত না সদূর!


জেনো, এমন নিরবতা

পরিত্যক্ত কোন বাড়ির মতো


শীতে, জড়ানো কুয়াশায়



সূর্য কাঁধে ডুবে যাচ্ছে

               কিছুটা আকাশ

শীতকাল, বাড়িটায়

শুকাতে দেওয়া জাম্পারটা তখনো ক্লান্ত নয়

এই জলমুখী হাওয়ায়

আমি জানি না, এমন মানুষ

                        অতটা মানুষ নয়, যতটা জীবন

ছায়ায় ভরে থাকে সূর্যমুখীর মতো


ওগো, নীলুফা বেগম

সন্ধ্যাটা তোমার শরীর

যেন তোমারি নিঃশ্বাসে ঘন হচ্ছে

অন্ধকার, মোল্লা বাড়ির নাম


রাতসমূহ


সারাবেলা পার করে এসে,  রাতে

তারিখটা যেন

আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে

ছেলেটার ঘুমন্ত মুখ দেখে ভাবি

জীবনে কিছু থেকে গেছে তবু


শুধু কয়েকবার ঘুমের ফাঁকে 

বউকে বলতে শুনি

আমি কারণে তোমার সংসার করলাম


সম্ভবত


আমি মরে গেলে কেউ কেউ

করবে পরিমিত হাহাকার

কারো কাছে আমি শালা

গুডবাই, মিনিংলেস


আমি মরে গেলে,উঠোনে

যেখানটায় আমাকে সাময়িক রাখা হবে

সেখানটার আমড়া গাছটায় থাকবে

গিজগিজ পাতার পর পাতা, রোদ দুপুরবেলা

তার নিচে আমি, আমার মলিন নয়ন দু'খানা

তুলশিপাতায় থাকবে বুজা


আমি ভাববো রোদ, কিন্তু রোদের কোন

ইমেজ নাই, শুধু একটু একটু বাতাস নড়বে

মুখে আমার


কেউ করবে হাঁসফাঁস, কবি ছিলো ছেলেটা

আজাইরা বেকার, কিছুই করে নাই হুদাই

কেউ দিবে তাড়া দ্রুততম শ্মশানে নেবার


ভ্যাপসা গরমকাল, ঘামের সাথে মিশে যাবে

কারো রূপালী মাছের মতো কান্না


মানুষ ঘেঁষে মানুষ হাঁটবে

আর আমি নিবো তাদের ছায়া




শুভ্র সরকার
জন্ম- মুক্তাগাছা,  ময়মনসিংহ
০৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ইং

প্রকাশিত কবিতার বই: বিষণ্ণ স্নায়ুবন

সম্পাদিত ছোট কাগজ: মেরুদণ্ড



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ